কম্পিউটার ব্যবহার সম্পর্কে সাধারন ধারনা হচ্ছে, এটা ব্যবহার করলে বুদ্ধি বাড়ে। গেম খেললে তো কথাই নেই, গান শুনলে, ভিডিও দেখলে মগজ তরতর করে বাড়তে থাকে। এর পেছনের কারনটাও বোধগম্য। যারা কম্পিউটার তৈরী করেন, গেম এবং অন্যান্য সফটওয়্যার তৈরী করেন, যারা এগুলি বিক্রি করেন তাদের প্রত্যেকেরই বিক্রি হওয়া প্রয়োজন। কাজেই মানুষকে কম্পিউটার কেনানো প্রয়োজন। আর বাংলাদেশে কম্পিউটারের প্রসার, প্রচার অথবা যাই বলুন না কেন, তার পুরোটাই হয়েছে ব্যবসায়ীদের কল্যানে। কাজেই এখানে এই মানষিকতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
যারা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষনা করেন তারা কি বলেন ? এবিষয়টিও তাদের নজর এড়ায়নি।
প্রতিটি গবেষনার ফল একই, কম্পিউটার ব্যবহারে বুদ্ধি বাড়ার কোন প্রমান নেই। এমনকি কয়েক মাস বয়সী শিশুর হাতে কম্পিউটার তুলে দিলে সে অন্যদের থেকে ভাল করবে এমন কোন প্রমান কখনো পাওয়া যায়নি। এমনকি অল্পবয়সে কম্পিউটারে হাতেখড়ি দিলে কম্পিউটার বিষয়ে ভাল করবে এমন নিশ্চয়তাও নেই।
তাহলে, কম্পিউটার ব্যবহার করবেন কেন ? কি কাজ করবেন ? সে কাজের জন্য কোন ধরনের কম্পিউটার আপনার প্রয়োজন ?
আপনি বর্তমান যুগের সবচেয়ে আধুনিক কম্পিউটার ব্যবহার করবেন অথচ একটা চিঠি টাইপ করে প্রিন্ট করতে পারবেন না, কিংবা হিসেবের জন্য ক্যালকুলেটর টিপবেন এটা লজ্জাজনক। একাজটি আগে মাথায় রাখুন। লেখালেখির কাজ করা এবং সাধারন হিসেবের কাজ করার জন্য আপনার সবচেয়ে দামী কম্পিউটার প্রয়োজন নেই। এমনকি প্রোগ্রামিং এর জন্যও নেই। অবাক হবেন না, সি প্রোগ্রামিং ল্যাংগোয়েজ ব্যবহারের জন্য ১৫ বছর আগের কম্পিউটারই যথেষ্ট। যে টার্মিনেটর-২ এর এনিমেশন দেখে এখনও আমরা অবাক হই তা তৈরী করা হয়েছে পেন্টিয়াম তৈরীর আগে, ৩৩ মেগাহার্টজের ৪৮৬ প্রসেসর ব্যবহার করে। বর্তমানের সবচেয়ে কমদামী কম্পিউটার তারচেয়ে শতগুন শক্তিশালী।
সেইসাথে ইমেইল পাঠানো, মাঝেমধ্যে গান শোনা, সময়ে ভিডিও দেখা, বুদ্ধি ব্যবহার করতে হয় এমন গেম খেলা (এগুলি সাধারনত ছোটই হয়) এসব কাজও ওই সবচেয়ে কমদামী কম্পিউটারেই চলবে। নিজের প্রয়োজনে অথবা সন্তানের প্রয়োজনে যদি কম্পিউটার কিনতে হয় তাহলে যত অল্প টাকায় যত দ্রুত সেকাজটি করতে পারেন ততই ভাল। কোন একদিন যথেষ্ট টাকা হলে কিনব, কিংবা নতুন মডেল এলে কিনব একথা বলে বসে থাকার প্রয়োজন নেই। অমুকের কম্পিউটার কত ভাল একথা না ভেবে আপনি কাজে তারচেয়ে কতটা এগিয়ে সেটা ভাবুন। কম্পিউটার থাকা আর না থাকার মধ্যে পার্থক্য অনেক, দামী কম্পিউটার আর কম দামী কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্য সেতুলনায় সামান্য।
গেম খেলার জন্য সবচেয়ে বেশি র্যাম, সবচেয়ে দামী গ্রাফিক্স কার্ড ছোটদের হাতে না দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। যদি তাদের মংগল চান। বরং কম্পিউটারের সামনে না বসিয়ে যদি খেলার জন্য মাঠে পাঠাতে পারেন একদিন বেকহ্যাম, তেন্ডুলকার, সাকিব এর মত খেলোয়ার হতেও পারে। খেলোয়ার হওয়ায় দোষের কিছু নেই।
আর গেম যদি মুখ্য বিষয় হয় তাহলে কম্পিউটার না কিনে প্লেষ্টেশন-গেমকিউব-এক্সবক্স কিনুন। গেমগুলি এদের জন্যই তৈরী। গেম ছাড়াও গান, ভিডিও, ইন্টারনেট সবই চলবে। ভাইরাস ভাবনা থেকে রক্ষা পাওয়া থেকে শুরু করে সফটওয়্যার শেখার মত কষ্টকর কাজ করতে হবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন